নীলফামারীর জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গ্রামীণ জনপদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এখন সকলের কাছেই সুপরিচিত। এ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অবস্থান। উপজেলা থেকে ১৪কিলোমিটার দূরত্বে মৌলভীবাজার ক্যানেলের পাশেই গড়ে উঠেছে মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
প্রতিবছরই ভালো ফলাফলে উপজেলা জুড়ে সুনাম আর সুখ্যাতি। বিদ্যালয়টি যেতে চোখে পড়ে গ্রামীণ আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। মাঠের পর মাঠ। সড়কের দুই পাশে ধান ক্ষেত আর সবুজ সমারোহ।
মাগুড়া ইউনিয়নের চারিদিকে নদী বেষ্টিত জেলে আর কৃষিজীবী খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিদিনই জীবন যুদ্ধে লড়ে। জেলেরা নদীতে মাছ ধরে আর কৃষকরা মাঠে মাটির সঙ্গে লড়ে সোনা ফলায়। তাদের শ্রমে-ঘামে চলে জীবন সংসার। এক সময়ে অভাব-অনটন আর টানাপোড়া ছিল তাদের প্রতিদিনের জীবনসঙ্গী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে তাদের আশপাশ। পরিবর্তন আসছে সর্বত্রই। কৃষি ও শ্রমজীবী গ্রামীণ ওই জনপদের মানুষগুলো তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর জীবন-জীবিকা নিয়ে ভাবে। বর্তমান সময়ে সব কিছুতে একটি পরিবর্তন এসেছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা যেন পিছিয়ে নেই। তাই তারা তাদের সন্তানদের দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বর্তমান সময়ের সাথে তারা পড়ালেখায় সাধারণ শিক্ষা না নিলেও সন্তানদের এমন প্রয়োজনীয়তা খুব ভালো করে বুঝেন।
আর সেই কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষদের চিন্তার অবসান ঘটাতে আগ্রহী হন ওই এলাকারই সু-সন্তান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষানুরাগী শাহ আলম। তিনি নিজ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করে। এলাকার অসহায় সুবিধা বঞ্চিত সন্তানদের সাধারণ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিতে উদ্যোগী হন। ২০০০ সালে তার পিতা, মাতার নামে নিজ অর্থায়নে দেড় একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টিতে এখন ২০০ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন রয়েছেন শিক্ষক।
তাদের গ্রামেই নেই সাধারণ শিক্ষা অর্জনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা আছে তা শহরে এবং অনেক দুরে। কিন্তু শহরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত আর পড়ালেখার খরচ কুলিয়ে সকলের গন্তব্যে পৌঁছানোর সাধ্য কোথায়? সারা দিন নদী নালায় আর মাঠেঘাটে কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা যাদের নেই তাদের সন্তান শহরে গিয়ে শিক্ষিত হবে তা যেন দুঃস্বপ্ন। তাই নিজ এলাকায় সু-শিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ২০০০ সালে ৫০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়টি প্রবেশ পথে দুই পাশে ফুলের বাগান। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি এখন এলাকার অন্যতম বিদ্যালয়টি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ১২জন শিক্ষকের তদারকিতে পরীক্ষায় পাশের হারে উপজেলায় ভালো একটা স্থান দখল করে নিয়েছে।
তাদের এখন শতভাগ শতাংশের ফলাফলে অভিভূত এই মাগুড়া ইউনিয়নে অভিভাবক ও সচেতন সমাজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে চলছে। শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ালেখার সু-ব্যবস্থা, রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী। শিক্ষার্থীদের ফ্রি চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক নানা সুযোগ-সুবিধা। সু-প্রশস্ত কম্পিউটার ল্যাব, পরিচ্ছন্ন ক্লাসরুম আর খেলাধুলার সু-ব্যবস্থা। রাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত নির্মল পরিবেশে চমৎকার ক্যাম্পাস শুরু থেকেই দৃষ্টি কাড়ছে সকলের। এখন প্রতিষ্ঠানটি ওই এলাকার অন্ধকার দূর করে আলোর বার্তা নিয়ে এসেছে। এখন দিন যত যাচ্ছে বিদ্যালয়টি তার শিক্ষার আলো ততই ছড়াচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার লাইজু বলেন, দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিদ্যালয়টিকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে এত বিশাল ব্যয় বহন করছেন শিক্ষা অনুরাগী শাহ আলম। নিজ এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে এখানে অধ্যয়ন করে শিক্ষিত হচ্ছেন। বিদ্যালয়টি এগিয়ে নিতে তিনি শিক্ষাবান্ধব এ সরকারসহ সকলের সহযোগিতা চান।
প্রতিবেদনঃ লাতিফুল আজম।