চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টানাবৃষ্টিতে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার ৮০ শতাংশ কৃষিজ জমি ডুবে যায়। এ টানা বর্ষণে পাহাড়ী ঢলের পানিতে নির্জ্জিত হয় বেশকয়েকটি এলাকা।
উপজেলার সাধনপুর, কালীপুর, বৈলছড়ি, জলদী, শীলকূপ, চাম্বল, পুঁইছড়ি এলাকায় পাহাড়ি ঢলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও তলিয়ে গেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এতে চরম দূর্ভোগে পড়ছে এলাকার লোকজন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের, পুকুর ও রস্তাঘাট ডুবে যায়। জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে অনেক এলাকায় পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির ফলে উপজেলার সাধনপুর, কালীপুরের গুনাগরি পয়েন্ট ও বৈলছড়ি বাজারের উত্তর পাশে বাঁশখালী প্রধানসড়ক টপকে গিয়ে পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবাহিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়ে। অনেকের বসতঘরে পানি ডুকে যায়। তলিয়ে যায় পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের চলাচলের সড়কগুলো। পাশাপাশি মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানেও পানি ডুকে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে পড়ে। পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ মাছের প্রজেক্ট ও পুকুর ডুবে গিয়ে পানির সাথে বিলীন হয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। পাহাড়ী ঢলের পানি আটকে যাওয়ার ফলে এমন বির্পযয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এলাকার লোকজন। এ পাহাড়ী ঢলে পূর্বাঞ্চলে পানির উচ্চতা ৪/৫ ফুট ছাড়িয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কথা বললে খোরশেদ আলম নামে একজন জানান, ‘রাতভর টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ী ঢলের পানি বাঁশখালী প্রধান সড়কের সাধনপুর ও কালীপুরে টপকে যায়।’ কালীপুরস্থ মাওলানা নাছির উদ্দিন জানান, ‘টানাবর্ষণে আমাদের কালীপুর-বৈলছড়ি আজিজিয়া জামেয়া মিল্লিয়া কাছেমুল উলুম মাদরাসার পুকুর ডুবে যায়, মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে পানি ডুকে শিক্ষার্থীদের বইপত্র ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়। শুক্রবার মাদরাসা বন্ধ থাকার কারনে শিক্ষার্থী না থাকায় এ ক্ষতিটা একটু বেশী হয়েছে। তবে, বিগত সময়ে ৬/৭ দিনের টানা বৃষ্টিতেও এরকম বন্যা দেখিনি আমরা।বৈলছড়ি ইউপির সাবেক মেম্বার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পাহাড়ী ঢলের পানিতে বৈলছড়ি উত্তর পাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাঞ্চলের দুইশতাধিক পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়ে। পানির উচ্চতা এতো বেশী ছিল যে বাঁশখালী প্রধানসড়ক টপকে গিয়ে পাহাড়ি পানি প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে পাহাড়ী ছড়াগুলো কিছু প্রভাবশালী মহল দখল করে সংকুচিত করায় পানির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। যার দরুণ প্রায় বর্ষায় এ করুণ দশায় পড়তে হয় আমাদের।
আব্দুল মান্নান নামে একজন বলেন, ‘আজ সকালে জলদী মিয়ার বাজারে (কাঁচাবাজার) বাজার করতে আসলে দেখি পুরো কাঁচাবাজার পানির তলে। অভ্যন্তরিণ সড়কটিও পানিতে ডুবে যায়।’ রেজাউল করিম সাওদাগর নামে একজন বলেন, ‘টানা বর্ষণে পাহাড়ী ঢলের পানি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় শীলকূপ টাইমবাজারের পূর্ব পাশে বড়ুয়া পাড়া সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় দোকানে পানি ডুকে। এভাবে বাাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের চাম্বল, পুঁইছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজ জমি, মৎস্যপ্রজেক্ট, পুকুর ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়।’
বাঁশখালী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক জানান, ‘গতরাত থেকে সকাল অবধি টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ী ঢলের পানিতে ৮০ শতাংশ কৃষিজ জমি পানির নীচে তলিয়ে যায়। কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যাবে দু’একদিন পরে। পাহাড়ী ছড়াগুলো অবমুক্ত থাকলে এ ক্ষয়ক্ষতি হতো না বলে জানান তিনি।