শনিবার , ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. আইন-আদালত
  2. কৃষি ও পরিবেশ
  3. খুলনা
  4. চট্টগ্রাম
  5. ঢাকা
  6. তথ্যপ্রযুক্তি
  7. বরিশাল
  8. বিনোদন
  9. মতামত
  10. ময়মনসিংহ
  11. রংপুর
  12. রাজশাহী
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. সমগ্র অর্থনীতি

হানাদারী শাসন ও হত্যাকাণ্ড একই আদর্শের প্রতিফলন

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
আগস্ট ১৭, ২০২৪ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি নাতনিসহ অন্যান্য মিলে ৫৬% কোটার বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীগণ কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য সারাদেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ডাক দেন। সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর অবান্তর অবমাননাকর মন্তব্যের কারণে সংস্কার আন্দোলন উত্তপ্ত হয় এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবির সপক্ষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে থাকেন। পরমত অসহিষ্ণু এবং স্বৈরাচার সরকার তা মেনে নিতে পারে নি। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বনিকৃষ্ট হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে সরকার।

গত ১৮ জুলাই, ২০২৪ বৃহস্পতিবার!! বাঙালির জীবনে ভয়ংকরতম বিভীষিকাময় দিনরাত!! এই রাতে ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে সরকার ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন চালায়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত অগ্রনায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের জঙ্গি ছাত্রসংগঠন ‘ছাত্রলীগ’ এবং পুলিশ-বিজিবি যে ভয়ানক গণহত্যা চালায় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই গণহত্যায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণ শহীদ হন এবং লাখ লাখ মানুষ আহত হন।

এরপর ১৯ জুলাই শুক্রবার!! সারাদিন ঢাকাসহ সারাদেশ থমথমে অবস্থা!! বিকাল থেকে শুরু হয় পুলিশ-বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর যৌথ হত্যাযজ্ঞ। সেনাবাহিনী বিবেকের তাড়নায় কম গুলি ছুড়লেও আকাশ থেকে হেলিকপ্টার যোগে র‌্যাব (RAB) নির্বিচারে গুলি করে এবং সাউন্ডগ্রেনেড ছুড়ে স্বাধীন ও শান্তিকামী মানুষের ওপর এক অমানবিক, ঘৃণ্য ও নারকীয় যুদ্ধ চালায়। ঢাকা শহরকে তখন যুদ্ধবিধ্বস্থ গাজা সিটি মনে হতে লাগলো। নিরস্ত্র নিরপরাধ মানুষের ওপর এমন সশস্ত্র যুদ্ধ এর আগে পৃথিবী কখনো দেখেনি। নমরুদ-ফেরাউন এবং আবু জেহেলের আমলে এমন নৃশংসতা ছিলো বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। এমনি জঘন্যতম যুদ্ধের ফলে ছাদে খেলারত অবস্থায় ৬ বছরের রিয়াসহ ঘরের ভেতর থাকা অনেক শিশুও গুলিবিদ্ধ হয়ে ড্যাফোডিল ফুলের মতো জন্মের পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ইউনিসেফ (UNICEF) বলছে ৩২টি শিশু এই হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছে।

ইতিহাসের সেকাল-একাল: ব্রিটিশ আমলের নির্যাতন-নিষ্পেষণ মানব ইতিহাসের কালোতম অধ্যায় হিসেবে সুবিদিত। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বহুবার দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ। দুর্ভিক্ষ কবলিত ভুখা-নাঙ্গা ভারতীয় এবং ব্রিটিশ বেনিয়ার নির্বিচার হত্যার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ। শিশু-কিশোর, ছাত্র-জনতা কেউই তাদের নির্মম হত্যা থেকে মুক্তি পায় নি। ব্রিটিশ স্বৈরাচার অসংখ্য হিন্দু-মুসলিম, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং বহু আলেম-ওলামা মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে হত্যা করেছে শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার জন্য। তরুণ যুবক যখনই প্রতিবাদ করেছে, রুখে দাঁড়িয়েছে, আন্দোলন সংগ্রামের চেষ্টা করেছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে স্বৈরাচার-খুনি শাসক নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। পাকিস্তানী স্বৈরশাসক টিক্কা, ইহায়িয়া খান এবং আইয়ূব খান তারাও ব্রিটিশ বেনিয়া থেকে আরও একধাপ এগিয়ে। পাকহানাদার বাহিনী পূর্বপাকিস্তানীদেরওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। নারী-শিশু, কিশোর-তরুণ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউ বাদ যায় নি। যে ক্ষমতার জন্য এতো এতো নিরাপরাধ নিরীহ জনতা হত্যা সেই ক্ষমতাই এক সময় থাকে না। মানুষের কাছে অতিধিক্কৃত এবং তাদের শোচনীয় পরাজয় ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়। মানুষের মনে থাকে শুধু স্বজন হারানো ইতিহাস, স্বৈরাচার ও তার পরিবার পরিজনের প্রতিও একরাশ সর্বজনীন ঘৃণা এবং সুতীব্র ক্ষোভ।

পাক-হানাদারের প্রেতাত্মা: বর্তমান সরকার পাক-সরকারের প্রেতাত্মা। আর এই সরকারের লালিত পালিত পুলিশ বাহিনী হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মা। এরা সব নব্য-রাজাকার, অসভ্য জানোয়ার। রক্তপিপাসু হায়েনা। এরা শেখ হাসিনা কর্তৃক জন্ম দেওয়া হায়েনা। নব্যমুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ, যে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে বাংলাদেশকে দাসত্বমুক্তির পথ দেখালো। সুতরাং আবু সাঈদ নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ। নিঃসন্দেহে তিনি মহাবীর। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন কেয়ামত পর্যন্ত।

তরুণের সংগ্রাম: তরুণের প্রতিবাদ ছাত্র আন্দোলন সাধারণ জনতার সর্বৈব বিক্ষোভ কখনও বৃথা যায় না। তরুণেরা জরাজীর্ণ একনায়কতান্ত্রিক বাকশালী শাসনকে হঠিয়ে সুশাসন কায়েম করেই ছাড়ে। রক্ত দিতে যাদের ভয় নেই, মৃত্যুকে যারা পরোয়া করে না, তাদেরকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। তরুণেরা দেশকাল বা সাম্প্রদায়িকতার ছাত্র নয়। এ জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘তাহাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই। দেশ-কাল-জাতি-ধর্মের সীমার ঊর্ধ্বে ইহাদের সেনানিবাস। …।’’ পথ-পাশ্বের যে অট্টালিকা আজ পড় পড় হইয়াছে, তাহাকে ভাঙিয়া ফেলিয়া দেওয়াই আমাদের ধর্ম; ঐ জীর্ণ অট্টালিকা চাপা পড়িয়া বহুমানবের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে।’’ তরুণের এই সেনানিবাস বিবেকের সেনানিবাস। যুদ্ধাস্ত্রের সেনানিবাস নয়। এই সেনানিবাস থেকে মানবতা প্রতিষ্ঠিত হয়। মানবতা ধর্ষিত হয় না। এই সেনানিবাস থেকে মানবতার বুলি বের হয় মারণাস্ত্রের গুলি বের হয় না। সেই তারুণ্যই আজ পথ দেখাচ্ছে দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার। অনেক মৃত্যুর কারণ যারা হয়, গণহত্যার কারণ যারা হয় তাদেরকে তারুণ্যের বিবেকের সেনানিবাস উৎখাত করেই ছাড়ে। এটাই তারুণ্যের দাবি। এটাই সত্যমুক্তির একমাত্র পথ।  সেই পথেই আজ কোটি কোটি তরুণ লড়ছে। তাদের পথের কাটা না হয়ে; বরং ফুল বিছিয়ে অভিবাদন জানিয়ে হানাদার সরকারের পদত্যাগ সময়ের দাবি। না হলে এবার হানাদার হারবেই ইনশাল্লাহ। বাঙালির রক্তে ক্লাইভ, আইয়ুব খান এবং এরশাদের হাত রঞ্জিত হয়েছে। সবশেষে শেখ হাসিনার হাত অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ জনতার রক্তে আজ লাল।

ন্যায়সংগত দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়ই: বস্তুত ন্যায়সংগত দাবির কারণে সারাদেশব্যাপী যেভাবে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে শতাব্দীর নিকৃষ্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হলো; তা ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি প্রেতাত্মা ছাড়া কেউ করতে পারে না। ভোটবিহীন জোর করে ক্ষমতালাভের পর স্বৈরাচার সরকার এর চেয়ে ভালো কাজ কখনো করতে পারে না। কাজী নজরুল ব্রিটিশ শাসনকে সমূলে নির্মূল করে নতুন শাসন ব্যবস্থা আনার জন্য তরুণদের আহ্বান করেছিলেন। আজও সেই আহ্বানের গুরুত্ব অধিক অর্থবহ। যে চেতনায় একদিন একীভূত হয়ে ব্রিটিশ বিদায় করা হলো, যে চেতনার বন্দুকে পাকহানাদার বাহিনীকে বিদায় দিলো বাঙালি। যে চেতনার বিষ্ফোরণে স্বৈরাচার এরশাদ বিদায় হলো সেই চেতনা আজ উল্টে গেছে। স্বাধীনতার ধ্বজাধারী এবং মুক্তিযোদ্ধা উৎপাদনের কারখানা আওয়ামী লীগ এখন শতাব্দীর নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার এবং খুনি। সাধারণ ছাত্র-জনতার রক্তে আনন্দ উৎসব করছে। জাতির অকল্যাণের কঠিন ঋণ আওয়ামী লীগকে শোধ দিতেই হবে। কাজী নজরুল-এর ভাষায় জবাব হোক: ‘‘আসিতেছে শুভদিন/ দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ”।

যারা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তারা তো নিঃসন্দেহে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী হতে চায় কি? তাহলে তো সেটি চুক্তিযুদ্ধ হয়ে যায়। শুধু ২ লাখ ৩৫ হাজারের সন্তান ও নাতি নাতনি যদি সুযোগ পায় তাহলে ৩০ লাখ শহীদের সন্তানদের কী দিতে হবে? তারা কোথায় আছে? কেউ খোঁজ নিচ্ছেন কি? ছাত্রগণ এমনি একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে বসেছিলো। কিন্তু দাবি না মেনে স্বঘোষিত স্বৈরাচার তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন; মন্ত্রীলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশলীগ এবং কিছু সাংবাদিকলীগ যেভাবে ছাত্রদেরকে হত্যা করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে এবং সমর্থন করেছে তাতে বাংলাদেশ কারও কাছে ইজারাভুক্ত হয়েছে কি না সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী আমাদের সন্তানতুল্য। ১৮-১৯ জুলাই ২০২৪। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের চেয়েও ভয়ংকর ছিলো বাঙালি জাতির জন্য। দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা ২০২৪ সালে প্রাণ দিলেন তারা নব্য রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাণ দিলেন। তারা অবশ্য বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক, হয়েই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।

অপমান লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষকগণ: আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শার্দুলদের সামনে তাদের শিক্ষকদেরকেও অপমান করেছে পুলিশের কনিষ্ঠ কর্মকর্তাও। হয়তো ৬/৭ বছর আগেও তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিলো। এই সব বাইচান্স জন্ম নেওয়া বেয়াদবেরা নিজেদের শিক্ষককেও চূড়ান্ত অসম্মান করেছে। কিন্তু কেনো? এর বড় কারণ- এদের একটা বড় অংশ মেধায় আসেনি। এইচ টি ইমামদের কর্তৃক প্রেরিত লিস্ট ধরে পিএসসি থেকে চাকুরি পেয়েছে এবং চাকরি প্রাপ্তির পর অবৈধ অর্থোপার্জন, অর্থপাচার, নানাবিধ অপরাধ কর্মে জড়ানো, বিরোধী দলের ন্যায়সংগত আন্দোলনে গেস্টাপো বাহিনীর তান্ডব চালানো, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ক্ষেত্রবিশেষে ধর্ষণ করেছে তাতে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত। সুতরাং এরা জানে যে, এই সরকার ক্ষমতা থেকে গেলে সামান্য তদন্ত হলেও এদের চাকরি থাকবে না। হবে বড় শাস্তি। তাই সরকার পদত্যাগ করতে চাইলেও এরা করতে দিতে চায় না।

অথচ হওয়া উচিত ছিলো ভিন্ন কথা। শিক্ষিত প্রশিক্ষিত ও সংস্কৃত মানুষ হিসেবে যেকোনো বাহিনীর সদস্যকে অন্যায় প্রতিরোধক এবং মিথ্যার অবসান চাইতে হতো। সুদীর্ঘকাল রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধা দুই অভিধায় বাঙালি জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখার কারণে ফুঁসে উঠেছে জনগণ। একদিন যারা দেশপ্রেমের বুলি আওড়াইতো আজ তারা দেশদ্রোহী। লালে লাল হয়েছে বাংলার অলি গলি, রাজপথ। কারণ নব্যমুক্তিযোদ্ধাদের আহ্বানে। ছাত্র-জনতার এই রক্তের ইতিহাস অনেক আগের। কবি নজরুল তাই এই সব অদম্য বীর সেনানীকে দুর্মদ হয়ে ওঠার ঐকান্তিক অভিপ্রায়ে লেখেন- “লাল লালে-লাল ওড়ে ঈশানে নিশান যুদ্ধের,/ ওঠে ওঙ্কার, রণ-ডঙ্কার,/ নাদে ওম্ ওম্ মহাশঙ্খ-বিষাণ রুদ্রের!/ ছোটে রক্ত-ফোয়ারা বহ্নির বান রে!/ কোটি বীর-প্রাণ/ ক্ষণে ক্ষণে নির্বাণ/ তবু শত সূর্যের জ্বালাময় রোষ/ গমকে শিরায় গমগম্!”

মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম: মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেই শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়। স্বাধীনচেতা মেধাবী ছাত্রগণ চিন্তা-চেতনায়, স্বভাবে অভাবে কাজে কর্মে সর্বত্র সার্বক্ষণিক স্বাধীনতা চায়। সেই স্বাধীনতার প্রথম ও প্রধানতম বিষয় হলো বাকস্বাধীনতা। পক্ষান্তরে স্বৈরাচারেরা কথা বলতে দিতে চায় না। সীমাহীন অপরাধের প্রতিবাদ হবে বলে। সংঘর্ষ-সংগ্রামের সূত্রপাত এখানেই। স্বৈরাচার অন্যায় ও মিথ্যার প্রতিনিধি। অপরপক্ষে স্বাধীনচেতা ছাত্র-জনতা সত্য ও ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি। সত্য-মিথ্যার এই মহাসংগ্রামে জয়ের জন্য প্রয়োজন গোলামীর জিঞ্জির ভাঙা। বিদ্রোহী কবি নজরুল তাই যথার্থই লিখেছেন- “মুসলিম হয়ে আল্লাহকে মোরা করিনিকো বিশ্বাস,/ ঈমান মোদের নষ্ট করেছে শয়তানী নিঃশ্বাস!/ ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি করিয়াছি, করিনি কিছুই ত্যাগ,/ জীবনে মোদের জাগেনি কখনও বৃহতের অনুরাগ!/ শহীদী-দর্জা চাহিনি আমরা, চাহিনি বীরের অসি,/ চেয়েছি গোলামী, জাবর কেটেছি গোলামখানায় বসি।/ তোমরা মুকুল, এই প্রার্থনা করো ফুটিবার আগে,/ তোমাদের গায়ে যেন গোলামের ছোঁয়া জীবনে না লাগে।/ গোলামের চেয়ে শহীদী-দর্জা অনেক ঊর্ধ্বে জেনো;/ চাপরাশির ঐ তকমার চেয়ে তলোয়ার বড় মেনো!/ আল্লাহর কাছে কখনও চেয়ো না ক্ষুদ্র জিনিস কিছু,/ আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে কভু শির করিয়ো না নীচু ”

সোনালী সকালের প্রত্যাশা: অন্ধকার রাত কাটবেই। আসবে সুন্দর প্রভাত। স্বৈরাচার নিপাতের মাধ্যমে মানুষ ফিরে পাবে ন্যায্য অধিকার। ভাইহারা বোনের কান্না, বোনহারা ভাইয়ের কান্না, সন্তানহারা পিতা-মাতার কান্না এবং পিতামাতাহারা সন্তানের কান্নার হবে চিরঅবসান। কুখ্যাত খুনিদল বিলুপ্ত বিরাণ হবে বাংলার মাটি থেকে। চতুর্দিকে শুধু ‘কারার লৌহ কপাট’ ভাঙার সুর ভেসে আসছে। কবিও তাই-ই চেয়েছিলেন। “আমি সেই দিন হবো শান্ত যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।/ অত্যচারীর খড়গ-কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।” জাতীয় কবি যেভাবে উৎপীড়ক-নিপীড়ক খুনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়াতেন তাতে তিনি বেঁচে থাকলে এই নিরীহ নির্বিবাদি ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াতেন এবং এতে তিনি তকমার নিকট হতে একটি তকমা পেতেন তা হলো ‘রাজাকার’। ভাগ্যিস কবি যথাসময়ে পাগল হয়েছিলেন এবং যথাযথাসময়ে মারাও গেলেন। যাই হোক কবির কথা দিয়েই শেষ করি- “মাগো আমি সেবক তোমার! জয় হোক মা’র।/ হাঁকলো তরুণ কারার-দুয়ার ঠেলে!/ বিশ্ব-গ্রাসীর ত্রাস নাশি আজ আসবে কে বীর এসো/ ঝুট শাসনে করতে শাসন, শ্বাস যদি হয় শেষও।/ – কে আছ বীর এসো!/ ‘বন্দি থাকা হীন অপমান!’ হাঁকবে যে বীর তরুণ,-/ শির-দাঁড়া যার শক্ত তাজা, রক্ত যাহার অরুণ,/ সত্য-মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের,/ খোদার রাহায় জান দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের।/ দেশের পায়ে প্রাণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের ,/ সত্য-মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের।/ হঠাৎ দেখি আসছে বিশাল মশাল হাতে ও কে?/ ‘জয় সত্যম’ মন্ত্র-শিখা জ্বলছে উজল চোখে।/ রাত্রি- শেষে এমন বেশে কে তুমি ভাই এলে?-/ ‘সেবক তোদের, ভাইরা আমার!- জয় হোক মা’র!’/ হাঁকলো তরুণ কারার-দুয়ার ঠেলে!

অনিরুদ্ধ অনিকেত

লেখক: বিশ্লেষক ও সংস্কৃতি কর্মী

সর্বশেষ - রংপুর

আপনার জন্য নির্বাচিত