কাঁঠাল স্বাস্থ্যকর খাবার। পাকা ও কাঁচা, কাঁঠাল দুভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালের তরকারি বাঙালি খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এটি নিরামিষ মাংস নামেও পরিচিত। কাঁচা কাঁঠাল স্বাদে আর গুণে কম যায় না।
পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার বলেন, কাঁচা কাঁঠাল রোগব্যাধি উপশমে যেমন কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। এমনকি কাঁঠালের বিচিতেও আছে শর্করা। এটি চাইলে খেতে পারবেন তরকারি, হালুয়া বা ভর্তা হিসেবে। তবে এতে থাকে আঁশ, তাই বেশি খেলে হজমে গোলযোগ হতে পারে।’
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে খাদ্য-আঁশ থাকে দুই গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, চর্বি দশমিক ৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৯৭ আইইউ ও ভিটামিন-সি ৬ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের কাঁঠাল খাওয়ায় কিছুটা বিধিনিষেধ আছে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো।
এখানে কাঁঠালের কিছু পুষ্টিগুণ বর্ণনা করা হলো:
কাঁঠালের বিচির প্রোটিন: কাঁঠালের বিচি গুঁড়ো করে সকালের জুস হিসেবে খেতে পারেন। কাঁঠালের বিচি ফেলনা নয়। এটি চাইলে খেতে পারবেন হালকা নাশতায়, সালাদ, তরকারি, হালুয়া বা ভর্তা হিসেবে। কাঁঠালের বিচিতে থাকা প্রোটিন মাংসপেশি গঠনে ভূমিকা রাখে।
বয়সের ছাপ দূর করে: কাঁঠাল আপনার বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মুখে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। এটি ত্বকের জন্য ভালো। এর মধ্যকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ সৃষ্টিকারী মুক্ত উপাদানের (ফ্রি র্যাডিক্যালস) বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় হাড়ের ক্ষয় ঠেকাতে পারে কাঁঠাল।
ভিটামিন এ, সি ও বি৬: কাঁঠালে আছে নানা রকম ভিটামিন। কাঁঠাল বহুগুণসম্পন্ন। কাঁঠালে থাকা ভিটামিন এ-র কল্যাণে মাথার চুল ভালো থাকে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ে ও চোখের সমস্যা কমে। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, অ্যাজমা, কাশি, সর্দি ও ক্যানসারের মতো রোগ দূর করে। এর ভিটামিন বি৬ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
শর্করার উৎস: কাঁঠাল প্রায় কোনো কোলস্টেরল নাই বললেই চলে। তাই কাঁঠাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। যেকোনো বয়সের মানুষ এটা খেতে পারেন। এটি শক্তির ভালো উৎস। এতে আছে ভালো শর্করা। নাশতা হিসেবে বা অন্য খাবারের বিকল্প হিসেবে কাঁঠাল খেতে পারেন।
হজমশক্তি বাড়াতে: পেটের নানা রকম পীড়া থেকে মুক্তি দিতে পারে কাঁঠাল। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়াতে সাহায্য করে। এতে যে আঁশ থাকে, তা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। পেটের অম্লতা ও আলসার ঠেকাতে কাঁঠাল খেতে পারেন।
ওজন কমায়: এতে চর্বির পরিমাণ খুব কম। তাই বেশি খেলেও ওজন বাড়ার শঙ্কা নেই। বরং পেট ভরে রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে কাঁঠাল।
কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা
রেটিনার অবক্ষয় রোধ: যেহেতু এটি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁচা বা পাকা কাঁঠাল যোগ করলে তা আপনার রেটিনার অবক্ষয় রোধ করতে পারে, এইভাবে স্বাস্থ্যকর চোখের স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখে। কাঁঠাল কীভাবে আপনার চোখের স্বাস্থ্যে সাহায্য করে তা উল্লেখ করার পাশাপাশি, পুষ্টিবিদ শ্বেতা জে পাঞ্চাল এই ফল খাওয়ার অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও শেয়ার করেছেন।
থাইরয়েড হরমোন: আপনি যদি হাইপারথাইরয়েডিজমে ভোগেন তাহলে কাঁঠাল আপনার জন্য অপরিহার্য। এতে থাকা প্রয়োজনীয় কপার আপনার থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা মসৃণ করতে সহায়তা করতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যায় কাঁচা কাঁঠাল আপনার খাবারে যোগ করে নিন।
হাড় মজবুত করে: শুধু ক্যালসিয়াম নয়, কাঁঠালে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে, যা আপনার হাড়ের জন্য উপকারী। পটাসিয়াম কিডনির মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ক্যালসিয়ামের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করতে পারে, এইভাবে আপনার সামগ্রিক হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।