গত ২২ ডিসেম্বর বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় নিম্নমানের ভুসা খোয়া দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগে নিউজটি প্রকাশিত হওয়ার পর কাজটি বন্ধ রাখে উপজেলা প্রকৌশল। সেই কাজটি আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি)আবারো নিম্নমানের খোয়া দিয়ে শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের পায়তারা করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এলাকাবাসীর অভিযোগ অফিসের যোগসাজোসে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে রাস্তার কাজ করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করবে। এ জন্য এলজিইডি নিম্নমানের কাজ দেখেও না দেখার ভান করছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে আজ শনিবার প্রকল্প এলাকা থেকে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান- নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। খোয়া পরিক্ষা করার পর কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এলজিইডি সূত্র জানায়-রংপুর বিভাগ গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে রণচন্ডী ইউপি অফিস-বাজে ডুমুরিয়া হাট থেকে বড় ডুমুরিয়া রাস্তা পাকাকরনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেন এলজিইডি। টেন্ডারে ১ কোটি ১ লাখ ৭৭হাজার ৫ শত ৮০ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজ পায় নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামীম রেজা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সুজাদ আলী শামীম(বাবুল)।
আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়- এলাকাবাসীর তোপের মুখে বন্ধ করা কাজের সেই সব খোয়া পানি দিয়ে রোল করা হচ্ছে। একটু সামনে গেলে দেখা যায় নিম্নমান, ভুসা খোয়া ও রাবিশ খোয়া বিছানা হচ্ছে। এলাকাবাসীর নিষেধ সত্ত্বেও ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের খোয়া রাস্তায় ফেলছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে নিম্নমানের ও ভুসা খোয়াগুলোর উপরে ভাল খোয়া ছিটিয়ে তারা ঢেকে দিচ্ছে। এ যেন নিম্নমানের কাজের প্রতিযোগীতা চলছে। নিম্নমানের ও ভুসা খোয়া দিয়ে কাজ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসী জানান-উপজেলা প্রকৌশলী রাস্তার কাজ বন্ধ রাখার জন্য বললেও আজ আবারো নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । কাজটির জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ রাস্তায় নিম্মমানের খোয়া ব্যবহার করছে, যা কিছু দিনের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙ্গে যাবে।
এলাকাবাসী আরো বলেন- অফিসের যোগসাজোসে নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী নিম্নমানের সামগ্ৰী দিয়ে কাজের সাথে জড়িত না থাকলে এলাকাবাসীর বাঁধা সত্ত্বেও কিভাবে কাজ করে তারা?
এ বিষয়ে ঠিকাদারের মুঠোফোনে (০১৭৪১৪৫৭০২৯) যোগাযোগ করে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- আমি সাইডে আছি আপনি কোথায় আছেন বলেন আমি আসতেছি। আর তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী ও কাজটির তদারকি কর্মকর্তা আখতার হোসেনের কাছে বন্ধ রাখা কাজটি শুরুর অনুমতি নিয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান- কাজটির খোয়া পরীক্ষা করে রিপোর্ট আসার পরে কাজটির শুরু করা কথা বলা হয়েছে। তারা অফিসকে না জানিয়ে কেন কাজটি শুরু করলো বিষয়টি দেখছি। কাজের অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার প্রশ্ন করা হলে তিনি পাশ কাটিয়ে বলেন- বিষয়টি দেখছি।
উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান জানান- রাস্তার কাজটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অফিসকে না জানিয়ে কেন রাস্তাটির কাজ করছে বিষয়টি দেখছি। কিছুক্ষন পরেই তিনি সূর পাল্টিয়ে এ প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে একটি ছবি পাঠিয়ে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে কাজ ভাল হচ্ছে।
এলাকাবাসী নিম্নমানের ও ভুসা খোয়া দিয়ে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ বন্ধসহ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্ৰহণে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছে।
প্রতিবেদনঃ লাতিফুল আজম, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী।