নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শুণ্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। এতে করে পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানাগেছে, ১৭৫ টি মধ্যে ৫১ টি প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারি শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার সমস্যা হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানান।
একজন সহকারি শিক্ষকের যোগ্যতা ও প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা সমান নয়। কিভাবে সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে প্রশ্ন অভিভাবক মহলের মাঝে।
সহকারি শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কিছু বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যালয় গুলোতে অনিয়মের আখড়া। স্লিপের টাকা আত্মসাৎ,সময়মতো স্কুলে না আসা,শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নেওয়া এসব অনিয়মের বিষয়গুলো বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা অফিস সূত্রে আরোও জানাযায়, এ উপজেলায় ১৭৫টি বিদ্যালয়ে রয়েছে ২৩ হাজার ৮ শত ২৯ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু উপস্থিতির সংখ্যা ৫০% কম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে চাঁদখানা বাবুপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এ স্কুলে হাজিরা খাতায় ১৩৫জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও প্রতিনিয়ত প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকে।
এদিকে দক্ষিন সিঙ্গেরগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজিরা খাতায় ১১৭ জন শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও প্রতিনিয়ত ১৬ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন।
এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকার কারন হিসেবে লক্ষ্য করা যায় যে, ওই বিদ্যালয় গুলোতে কোন অভিভাবক কিংবা মা সমাবেশ এবং এসএমসি মিটিংসহ কোনটি করা হয়না। এমনকি হোমভিজিট করার নিয়ম থাকলেও সেটি করেন না তারা।
কয়েকজন অভিভাবক জানান সহকারি শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া মান কমে যাওয়ায় আমাদের সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি। যে বিদ্যালয়ে লেখাপাড়া নেই সেই বিদ্যালয়ে অহেতুক আমাদের সন্তানকে রেখে লাভ কি।
বিদ্যালয় গুলোর ক্যাচমেন্ট এলাকার সচেতন মহল জানান, আসলেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষারমান বাড়ানো সম্ভব নয়। তাছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তেনারা সহজেই ঐ দায়িত্ব থেকে সরে আসতে চান না এমনকি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে দীর্ঘসময় ধরে থাকার চেষ্টা করে। যার ফলে অভিভাবকরা বাচ্চাদের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি করে দিচ্ছেন।
উপজেলার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান, দঃ চাঁদখানা বাবুপাড়া সপ্রাবি, কেশবা ইউনাইটেড মডেল সাপ্তাবি, মুশা সপ্রাবি, কেশবা উদয়ন সপ্রাবি, ছিট রাজিব পশ্চিমপাড়া সপ্রাবি, মধ্য রাজিব আদর্শ সপ্রাবি, পুষনা শহীদ শরিফুল ইসলাম সপ্রাবি, নিজামুদ্দিন বছিরন নেছা সপ্রাবি, উত্তর মাষ্টার পাড়া আদর্শ সপ্রাবি, উত্তর কুটিপাড়া সপ্রাবি, ভেড়ভেড়ী মাঝাপাড়া সপ্রাবি, কিশামত ধাইজান আব্দুল মজিদ সপ্রাবি, মন্ত্রনা কালিকাপুর সপ্রাবি, মধ্যকালিকাপুর আঃ গফুর সপ্রাবি, পুটিমারী ঝাকুয়াপাড়া সপ্রাবি, বানিয়াপাড়া নিউ মডেল সপ্রাবি, বাংলাদেশ শিশু সৈনিক সপ্রাবি, ঘোনপাড়া মডেল সপ্রাবি, মুশরুত পানিয়াল পুকুর সপ্রাবি, পানিয়ালপুকুর মিক্সড সপ্রাবি, নিতাই ছলিমের বাজার সপ্রাবি, নিতাই বাড়ীমধুপুর সপ্রাবি, নিতাই ডাঙ্গাপাড়া সপ্রাবি, নিতাই গাংবের সপ্রাবি, মুশরুত পানিয়ালপুকুর পশ্চিম পাড়া সপ্রাবি, পানিয়ালপুকুর দোলাপাড়া সপ্রাবি, দরগারপার সপ্রাবি, উত্তর দুরাকুটি ১নং সপ্রাবি, দুরাকুটি সপ্রাবি, উঃ বাহাগিলী ডাংগাপাড়া সপ্রাবি, দক্ষিণ দুরাকুটি ঘোপাপাড়া সপ্রাবি, দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ী সপ্রাবি, মাগুড়া মুন্সীপাড়া সপ্রাবি, উত্তর কিশানত বীরচরণ সপ্রাবি, রনচন্ডী সপ্রাবি, দক্ষিণ বদি বড় ডাংগা সপ্রাবি, দক্ষিণ সোনাকুড়ি, রণচন্ডী মাঝাপাড়া বালিকা সপ্রাবি, বদি মাঝাপাড়া সপ্রাবি, উত্তর বদি সপ্রাবি, গাড়াগ্রাম চিড়াতিপাড়া সপ্রাবি, উত্তর গাড়াগ্রাম ধাইজানপাড়া সপ্রাবি, গাড়াগ্রাম সপ্রাবি, মাগুড়া মাস্টারপাড়া বালিকা সপ্রাবি, পূর্ব দলিরাম গোস্বামীপাড়া সপ্রাবি, গণেশ আদর্শ সপ্রাবি, দলিরাম সপ্রাবি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন ,নিয়মানুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে সমস্যা রয়েছে জানতে পেরেছি। অনিয়মের বিষয়টি জেনেছি ধীরে ধীরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিবেদনঃ লাতিফুল আজম,কিশোরগঞ্জ,নীলফামারী।